বাংলাদেশে পেনশনার সেভিংস সার্টিফিকেট (PSC) হল একটি সরকারি সঞ্চয়পত্র যা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং সহায়তা প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যারা সামরিক এবং বিভিন্ন আধা-সরকারি সংস্থায় চাকরি করেছেন। এই পেনশন বাংলাদেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর দ্বারা জারি ও পরিচালিত হয়।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্য তাদের একক অর্থপ্রদান, জিপিএফ, এবং একক অনুদান বিনিয়োগ করার উপায় হিসাবে বাংলাদেশ সরকার ২০০৪ সালে সঞ্চয়পত্র প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিল। অবসর গ্রহণের পর, একজন ব্যক্তি বা পারিবারিক পেনশনভোগী ন্যূনতম ৫০,০০০ মূল্যের সঞ্চয়পত্র ব্যবহার করে ২,০০,০০০/-৫,০০,০০০ এবং ১০,০০,০০০ -এর সঞ্চয় বন্ড অর্জন করতে পারেন। যে কোনও ক্ষেত্রে, এটি অনুতোষো এবং সাম্প্রতিকতম ভবিষ্য তহবিল থেকে সর্বাধিক ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ পর্যন্ত এক নামে প্রাপ্ত রাশির বেশি হবে না। সঞ্চয় শংসাপত্রগুলি তাদের পাঁচ (পাঁচ) বছরের মেয়াদ জুড়ে যে কোনও সময়ে প্রত্যাহার করা যেতে পারে এবং মুনাফা চার্ট অনুসারে প্রয়োগ করা হবে।
ছোট বিনিয়োগে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে প্রাপ্য মুনাফার হার
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ত্রৈমাসিকভিত্তিতে মুনাফা প্রদান করা হয়। এ সঞ্চয়পত্রে নমিনী নিয়োগ করা যায়। সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনী সাথে সাথেই অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণের পর সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গাতে পারেন। হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে ডুপ্লিকেটসঞ্চয়পত্র ইস্যু করা যায়।অবসরপ্রাপ্ত সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী, সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতিগণ, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকুরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী/স্ত্রী/সন্তানগণ পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন।
কোথা হতে পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনা ও নগদায়ন করা যায়?
ব্যাংক হতে পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনা ভাল। তাছাড়া জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক শাখাসমূহ, যে কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এবং ডাকঘর থেকে ক্রয় ও নগদায়ন করা যায়। কিন্তু বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো হতে পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে কুপন ব্যবহার করার দরকার হয় না। ৩ মাস পর পর মুনাফা ব্যাংক হিসাবে এসে জমা হয়। তাই দেশের যে কোন বানিজ্যিক ব্যাংক হতে এ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যাবে তবে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক গুলো সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে না।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র মুনাফা হার । ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রদেয় মুনাফা ।২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রদেয় মুনাফা। ১০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রদেয় মুনাফা । পেনশন হিসাব ২০২৩
ক্রমিক নং | সঞ্চয় স্কিমের নাম | মেয়াদ (উত্তীর্ণ হইলে) | বিদ্যমান মুনাফার হার | ১৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত | ১৫,০০,০০১ টাকা হতে ৩০,০০,০০০ | ৩০,০০,০০১ টাকা হতে তদূর্ধ্ব |
পুনঃনির্ধারিত মুনাফার হার (%) | ||||||
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র | ১ম বছরান্তে | ১০.০০% | ১০.০০ | ৯.০৬ | ৮.১৫ | |
২য় বছরান্তে | ১০.৫০% | ১০.৫০ | ৯.৫১ | ৮.৫৬ | ||
৩য় বছরান্তে | ১১.০৪% | ১১.০৪ | ১০.০০ | ৯.০০ |
যথেষ্টপূর্তির পূর্বে নগদায়ন জন্য ছকে উল্লিখিত হারে মুফা প্রাপ্য এবং অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধিত হলে টাকা কর্তন করা পূর্বক টাকা পরিশোধ করতে হবে।
১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রদেয় মুনাফা
পেনশনার সঞ্চয়পত্রের উৎস এবং আয়কর নির্ধারণ হলে এই পত্রের একটি নির্দিষ্ট আয়কর প্রযোজ্য হতে পারে। সাধারণত, সঞ্চয়পত্র থেকে অর্জিত আয়গুলি মৌলিকভাবে শুধুমাত্র ব্যাংক বা অন্যান্য আয়দায়ক সংস্থা দ্বারা কর নির্ধারিত হয়। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা পর্যন্ত সর্বমোট বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার উপর কোন উৎসেকর কর্তন করা হয়না। ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকার অধিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেমুনাফার উপর ১০% হারেউৎসে কর কর্তন করা হয়। ব্যাংকে প্রতিমাসে যেহেতু মুনাফা অটোমেটিক জমা হয় তাই মুনাফা কেটে রেখেই ব্যাংক হিসাব ক্রেডিট করা হয়।
আয়করের পরিমান এবং প্রযোজ্যতা দেশের আয়কর আইন এবং বিধিমালা দ্বারা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত, আয়কর পরিশোধ করতে হলে সঞ্চয়পত্রের আয়ের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে আয়কর প্রদান করতে হয়। অনেক দেশে সঞ্চয়পত্রে আয়কর প্রদানের জন্য বিশেষ শর্তাদি বা সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে প্রতি লাখে কত টাকা মুনাফা পাবেন?
অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের জন্য পেনশনার সঞ্চয় বন্ড পাওয়া যায়, প্রতি তিন মাসে ২৯৪০ টাকা লাখের হিসেবে পেয়ে থাকেন।মুনাফার হার ১১.৭৬% এবং এটি ৫ বছরের জন্য বিনিযোগ করতে হয়। ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত তাই ২৯৪০ টাকা আসে। বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার উপরের হলে অবশিষ্ট বিনিয়োগের উপর ৫% হার কর প্রযোজ্য হইবে বিনিয়োগের মুনাফা হইবে ১০.৭৫%। আপনি পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন, কিন্তু যদি আপনি ৩০ লক্ষ টাকা অতিক্রম করেন তবে প্রতি ৩ মাস পর পরে লাভ পাবেন ২,১৯৩.৭৫ টাকা। লাভের হার হবে ৯.৭৫%।
মেয়াদপূর্ণ না হওয়ার পূর্বে পেনশনার সঞ্চয়পত্র নগদায়নের ক্ষেত্রে ১লক্ষ টাকায় ফেরতযোগ্য টাকার পরিমাণ
পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে যে সকল কাগজপত্র লাগে
পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে আপনার বেশ কিছু কাগজের দরকার হবে। যে গুলো থাকতেই হবে, না হলে আপনি পেনশন কিনতে পারবেন না। আপনাদের সুবিধার জন্য আমরা পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে যে সকল কাগজপত্র লাগে তা নিচে দেয়া হলঃ
- ক্রেতার ২ (দুই) কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি,
- নমিনি দিতে চাইলে প্রত্যেকের ২ (দুই) কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রদান করতে হবে;
- ভবিষ্য তহবিলের মঞ্জুরীপত্র এবং প্রাপ্ত আনুতোষিকের মঞ্জুরীপত্র অথবা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পি.এস.সি
- ফরম-২ পুরণ করে ইস্যু অফিসে দাখিল করতে হবে। ফরম-২ পুরণ এখানে ক্লিক করে সংগ্রহ করুন ।
- সঞ্চয়পত্র শুধুমাত্র ১ (এক)টি অফিস হতে ক্রয় করা যায়। একাধিক অফিস হতে এ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে অথবা ক্রয়সীমা অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে কোন মুনাফা প্রাপ্য হবেন না।
আশা করি আজকের পেনশনার সঞ্চয়পত্র ২০২৩ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।আজকের পোস্ট টি যদি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে, অবশই শেয়ার করতে ভুলবেন না।