দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করার নিয়ম: একটি সাধারণ ভুল ধারণা আছে যে দালাল ছাড়া একটি নতুন পাসপোর্ট করা অসম্ভব এবং দালাল পাসপোর্ট করিয়ে দেয়ার নাম করে অনেক পরিমাণ অর্থ এবং হয়রানি করত৷ আপনাদের মধ্যে অনেকে হয়ৎ দালালের খপ্পরে পড়েছেন। যদিও এটা সত্য যে অতীতে দালাল ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া কঠিন ছিল, কিন্তু এখন পাসপোর্ট অনেক সহজ হয়ে গেছে। আসলে, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, আমি বিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়াটি এখন বেশ সহজ। প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে, পাসপোর্ট পেতে দালালদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন নেই।আজকের আপনাদের জানব দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করার নিয়ম।
“পাসপোর্ট” শব্দটি ফরাসি থেকে এসেছে যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বর্তমান সময়ে বিদেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক। বিমান, রেল বা নদীপথে হোক না কেন, পাসপোর্ট এবং ভিসা ছাড়া অন্য দেশে প্রবেশ করা অবৈধ বলে বিবেচিত হয় । অতএব, প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পাসপোর্ট থাকা অপরিহার্য, কারণ এটি শুধুমাত্র একটি প্রয়োজনীয়তা নয়, নাগরিক হিসবে আপনার অধিকারও। এই পোস্টে, আমরা ই-পাসপোর্ট সম্পর্কিত নিয়মাবলী নিয়ে আলোচনা করব এবং আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া চেস্থা করব।
দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করার নিয়ম
আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই জানেন, ই-পাসপোর্ট পরিষেবা এখন বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় চালু হয়েছে, যা আপনাকে আপনার ঘরে বসেই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সুযোগ করে দিয়েছে।
অনলাইন পাসপোর্ট অ্যাপ্লাই এর মাধ্যমে, আপনি সমস্ত প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরণ করে, আপনার আবেদন জমা দিয়ে দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর প্রয়োজন ছাড়াই ফি জমা দিয়ে খুব সহজে পাসপোর্ট পেতে পারেন ৷ এই সকল প্রক্রিয়া আপনি আপনার বাড়ি থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজগুলো ঝামেলামুক্তভাবে করতে পারবেন।
আর্জেন্ট পাসপোর্ট করার নিয়ম
7 দিনের মধ্যে একটি আর্জেন্ট পাসপোর্ট করতে ৭৫০০ টাকা ফি দিতে হবে। খুব আর্জেন্ট পাসপোর্ট করতে, ২ দিনের মধ্যে, ১০৫০০ টাকা ফি দিতে হবে। ৭০০০ টাকা ফি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে ৬৪ পৃষ্ঠার এবং ১০ বছরের মেয়াদের একটি সাধারণ পাসপোর্ট পাওয়া যাবে।৭ দিনের মধ্যে ৬৪ পৃষ্ঠার একটি জরুরি পাসপোর্টের জন্য,৯০০০ টাকা ফি দিতে হবে। ২ দিনের মধ্যে ৬৪ পৃষ্ঠার একটি জরুরি পাসপোর্ট পেতে, ১২০০০ টাকা ফি দিতে হবে।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময়, বিভিন্ন ডকুমেন্ট প্রয়োজন। এই ডকুমেন্ট একটি সফল পাসপোর্ট আবেদন সম্পূর্ণ করার জন্য অপরিহার্য।তাই, পাসপোর্টের আবেদনের জন্য কী কী ডকুমেন্ট প্রয়োজন তা নিচে দেয়া হল
- অনলাইন আবেদনের প্রিন্ট কপি
- ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- ব্যাংকের ফি জমা দেওয়ার রশিদ
পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রদত্ত সমস্ত তথ্য সঠিক এবং সত্য কিনা তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় যদি কোনো ভুল পাওয়া যায়, তাহলে তা পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া এবং অত্যন্ত যত্ন সহকারে করতে হবে।
পাসপোট ফি কত টাকা?দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করার নিয়ম
আপনি যদি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার কথা ভাবেন, তাহলে আপনি হয়ত এটাও ভাবছেন বিভিন্ন ধরনের ই-পাসপোর্ট এবং তাদের ফি কত টাকা।
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং খরচ সহ বিভিন্ন ধরণের পাসপোর্ট রয়েছে। অতএব, কোনটি নেবেন সে সম্পর্কে একটি সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রতিটি বিভাগের জন্য ফি জানা গুরুত্বপূর্ণ।
নিম্নলিখিত বিভাগে, আমরা আপনাকে প্রায় প্রতিটি ধরণের ই-পাসপোর্টের মূল্য এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত সুবিধাগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করব।
Regular: ১৫ কর্মদিবস |
Express: ৮ কর্মদিবসে |
Super Express: দুই কর্মদিবস |
৫ বছরের মেয়াদ সম্বলিত ৪৮ পাতার পাসপোর্ট ফি
আপনি যদি ৫ বছরের বৈধতার সাথে একটি ৪৮-পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে চান, তাহলে আপনার বেছে নেওয়া বিভাগের উপর নির্ভর করে ফি পরিবর্তিত হতে পারে। ৪৮ পৃষ্ঠার একটি ৫ বছরের পাসপোর্টের জন্য তিনটি ভিন্ন বিভাগ পাওয়া যায়।
নিয়মিত পাসপোর্ট: ১৫ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান করা হবে। পাসপোর্ট ফি হলো: ৪,০২৫ টাকা। |
জরুরী পাসপোর্ট: ৭ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান করা হবে। ফি পরিমান: ৬,৩২৫ টাকা। |
অতি জরুরী পাসপোর্ট: ২ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান করা হবে। মোট ফি পরিমান: ৮,৬২৫ টাকা। |
১০ বছরের মেয়াদ সম্বলিত ৪৮ পাতার পাসপোর্ট ফি
আপনি যদি আপনার ৪৮-পৃষ্ঠার পাসপোর্টের বৈধতা ৫ বছর থেকে ১০ বছরে পরিবর্তন করতে চান, তাহলে ৫ বছরের পাসপোর্টের চেয়ে ফি বেশি হবে। ১০ বছরের পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফি ৫ বছরের পাসপোর্টের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি।
নিয়মিত পাসপোর্ট– ১৫ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান করা হয়ে থাকে। মোট ফি’র পরিমাণ: ৫,৭৫০ টাকা |
জরুরী পাসপোর্ট– ৭ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান। ফি পরিমান: ৮,০৫০ টাকা |
অতি জরুরী পাসপোর্ট– ২ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান। ফি পরিমান: ১০,৩৫০ টাকা |
১০ বছরের বৈধতার সাথে একটি ৪৮-পৃষ্ঠার পাসপোর্ট পেতে, আপনি প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে পারেন এবং নিবন্ধে আগে উল্লিখিত ফি দিতে পারেন।
৫ বছরের মেয়াদ সম্বলিত ৬৪ পাতার পাসপোর্ট ফি
নিচে ৫ বছরের মেয়াদ সহ ৬৮-পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় যে পরিমানে ফি দিতে হবে তা জানা জরুরী৷ যেহেতু আপনি পাসপোর্ট পৃষ্ঠার সংখ্যা বৃদ্ধি করবেন, সেজন্য পূর্বের যে ৫ বছর মেয়াদের ৪৮ পাতার পাসপোর্টের ফি রয়েছে, তার চেয়ে এখানে থাকা ফি বেশি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।
নিয়মিত পাসপোর্ট- ১৫ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান করা হবে। ফি পরিমান: ৬,৩২৫ টাকা |
জরুরী পাসপোর্ট– ৭ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান করা হবে। মোট ফি পরিমান: ৮,৩২৫ টাকা |
অতি জরুরী পাসপোর্ট– ২ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান। ফি: ১২,০৭৫ টাকা |
১০ বছরের মেয়াদ সম্বলিত ৬৪ পাতার পাসপোর্ট ফি
নীচে ১০ বছরের মেয়াদ সহ ৬৪-পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সাথে সম্পর্কিত ফি সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে।
নিয়মিত পাসপোর্ট– ১৫ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান। ফি: ৮,০৫০ টাকা |
জরুরী পাসপোর্ট– ৭ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান। ফি: ১০,৩৫০ টাকা। |
অতি জরুরী পাসপোর্ট– ২ কর্মদিবসের মাঝে প্রদান। ফি: ১৩,৮০০ টাকা। |
টাকা জমা দেবেন কোথায়?
অনলাইন ই-পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর, পরবর্তী ধাপ হল নির্বাচিত পাসপোর্ট বিভাগ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করা। সরকারী ওয়েবসাইট অনলাইন এবং ব্যাংক উভয় পেমেন্ট পদ্ধতি উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু অনলাইন পেমেন্ট বর্তমানে বন্ধ।
তাই, প্রয়োজনীয় অর্থপ্রদানের রসিদ পেতে আবেদনকারীদের অবশ্যই সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক বা ব্যাংক এশিয়াতে যেতে হবে। ব্যাঙ্ক ডিপোজিট ফর্মে থাকা আবেদনকারীর নাম ই-পাসপোর্ট আবেদনে প্রদত্ত নামের সাথে মিলেছে তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
উপরন্তু, জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপি প্রয়োজন হতে পারে এবং আবেদনকারীদের অনলাইন আবেদনের একটি প্রিন্ট কপি আনতে হবে।
পরিশেষ
আজকের পোস্টে পাসপোর্টের নিয়ম এবং ফি সংক্রান্ত আপনাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনার যদি আরও কোন প্রশ্ন থাকে, অনুগ্রহ করে ওয়েবসাইটের কমেন্ট বাক্সে মন্তব্য করতে পারেন।
যদি আপনাদের কাছে কোন তথ্য থাকে বা আপনি যদি প্রদত্ত তথ্যে কোন ত্রুটি লক্ষ্য করেন তবে অনুগ্রহ করে আমাদের জানান আমরা সেই অনুযায়ী পোস্টি আপডেট করব।
এই পোস্টটি পড়ার জন্য সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমার লেখায় বানান ভুল থাকলে ক্ষমা করবেন।
ই পাসপোর্ট ফি নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্তর (FAQ)
SMS দিয়ে ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
E Passport Status Check By SMS: 16445 পাসপোর্ট চেক
e passport status check by sms পদ্ধতি হল ডেলিভারি স্লিপের উপরে ডান পাশে বারকোর্ড এর নিচে এবং উপরে বাম পাশে xxxx-xxxxxxxxx এপ্লিকেশন আইডি দেওয়া থাকবে সেটা নিচে দেওয়া ফরম্যাটে 16445 তে SMS পাঠিয়ে দিন। [ EPP xxxx-xxxxxxxxx ] পাঠাতে হবে 16445 এ পাসপোর্ট চেক করতে।
ই-পাসপোর্ট টাকা জমা কত দিনের ভিতরে দিতে হয়?
আপনি পাসপোর্ট আবেদন ফি জমা দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করে একটি এসএমএস পাবেন, অথবা আপনি আবেদনের সময় এই তথ্যও পেতে পারেন।